মনোরঞ্জন শীল, গ্রাম : লেহেম্বা, উপজেলা : রানীশংকৈল, জেলা : ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : ধানের পাতার সবুজ অংশ পোকা খেয়ে ফেলছে এবং পাতা সাদা হয়ে খড়ের রঙ ধারণ করছে। এর প্রতিকারের উপায় কি?
উত্তর : ধান ক্ষেতে পামরি পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ পোকার কীড়া এবং পূর্ণবয়স্ক পোকা দুটোই ধান গাছে আক্রমণ করতে পারে। পূর্ণবয়স্ক পোকা পাতার ওপর সমান্তরাল দাগ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে আর কীড়া পাতার দুটো স্তরের ভেতরে সুড়ঙ্গ করে খায়। এ পোকা এক এলাকা থেকে উড়ে গিয়ে অন্য এলাকার ধানে ক্ষতি করতে পারে। এর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধী জাত যেমন- বিআর১৪ (বোরো), বিআর২৫, ব্রিধান২৭ (আমন) এর চাষ করতে হবে। জমির আইল বা পার্শ্ববর্তী জায়গা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। পোকার আক্রমণ হলে হাত জালের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। আক্রান্ত পাতার গোড়া থেকে তিন সেন্টিমিটার ওপরে পাতা কেটে নষ্ট করে ফেলতে হবে। তবে কাইচ থোড় আসার পর পাতা কাটলে ফলন কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে যদি শতকরা ৩৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা প্রতি গোছা ধান গাছে ৪টি পূর্ণবয়স্ক পোকা থাকে তাহলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্লাসিক/পাইরিফস/লিথাল ২ মিলি প্রতিলিটার হারে বা কারটাপ/ফরওয়াটাপ ১.৬ গ্রাম প্রতিলিটার হারে পানিতে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
মো. রনি, গ্রাম বেলেডাঙ্গী, উপজেলা : ফরিদপুর সদর, জেলা : ফরিদপুর
প্রশ্ন : পটোলের ফলগুলো হলুদ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলের ভেতরে পোকা দেখা যায়। প্রতিকারের উপায় কি?
উত্তর : পটোল গাছে ফলের মাছি পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। নানা রকমের পোকা পটোলের গাছ ও ফলে আক্রমণ করতে পারে। এর মধ্যে ফলের মাছি পোকা অন্যতম। এ পোকা কচি ফলের ভেতর ছিদ্র করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। এ কীড়া ফলের নরম অংশ খেতে থাকে। পরবর্তীতে পূর্ণবয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে। ফলের নরম অংশ খেয়ে ফেলার কারণে ফলের আকার আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়, ফল হলুদ হয়ে যায়, পচে গিয়ে ঝরে পড়ে। এ পোকার আক্রমণ যাতে না হয় সেজন্য ক্ষেত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জমিতে খুব ভালোভাবে চাষ দিয়ে পোকার পুত্তলি পাখিদের খাবার সুযোগ করে দিতে হবে। আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৩টি হারে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে ভালো ফল পাওয়া যায়। কুমড়া জাতীয় ফল ১০০ গ্রাম কুচি কুচি করে কেটে তাতে সামান্য বিষ (যেমন- সপসিন ০.২৫ গ্রাম) মিশিয়ে তা দিয়ে বিষটোপ তৈরি করে মাটির পাত্রে করে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা যেতে পারে। আক্রমণের পরিমাণ খুব বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি প্রতি লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো. নূর-এ-আলম, গ্রাম : গোবিন্দপুর, উপজেলা : সাতক্ষীরা সদর, জেলা : সাতক্ষীরা
প্রশ্ন : পুঁইশাকের পাতায় লালচে রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায় এবং পাতা ছিদ্র হয়ে যায়। কি করব?
উত্তর : পুঁইশাকের পাতায় দাগ রোগ একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগ হলে আক্রান্ত পাতায় হলদে থেকে বাদামি রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ক্রমে একাধিক দাগ একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি হয় এবং ছড়িয়ে যায়। এ রোগ যাতে না হয় সেজন্য আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ৩-৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ব্যবহার করা যায়। রোগের আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত পাতা ও ডগা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন- ব্যাভিস্টিন/নোইন ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকালে স্প্রে করা যেতে পারে। ১০-১২ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। ফসল সংগ্রহ করার পর পরিত্যক্ত অংশ ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
সাদেকুল ইসলাম, গ্রাম : খাজুরা, উপজেলা : নলডাঙ্গা, জেলা : নাটোর
প্রশ্ন : রেণু পোনার পুকুরে হাঁসপোকা হয়েছে। কিভাবে সমাধান করা যায়?
উত্তর : রেনু পোনার পুকুরে হাঁসপোকা অনেক বড় সমস্যা সৃষ্টি করে তাই পোনা ছাড়ার আগেই ১ বিঘা জমির পুকুরের জন্য ৫০ মিলি সুমিথিয়ন বা ডিপটারেক্স ১ কেজি পানিতে মিশ্রিত করে সব পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সুমিথিয়ন বা ডিপটারেক্স এভাবে দেয়ার ৭২ ঘণ্টা পর রেনু ছাড়তে হবে অথবা পরিমাণমতো ডিজেল রেণু ছাড়ার আগে পুকুরে প্রয়োগ করলে হাঁসপোকা দমন করা যায়। রেণু পোনা থাকা অবস্থায় অনেক সময় হাঁসপোকা দেখা যায়। এক্ষেত্রে শতক প্রতি ২ মিলি হারে সুমিথিয়ন ১০ দিন পর পর মোট ৩ বার ব্যবহার করতে হবে।
মো. মাসুম বিল্লাহ, গ্রাম : কনেশপুর, উপজেলা : যশোর সদর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : মাছের সুষম খাবার তৈরি ও প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : পুকুরের মাছের ওজনের ৩%-৫% হারে ভালো কোম্পানির ফিড (মেগা, কোয়ালিটি, সৌদি, আফতাব ইত্যাদি ফিড) অথবা খৈল, চালের কুঁড়া, গমের ভুসি মিশিয়ে ছোট ছোট মণ্ড তৈরি করে প্রতিদিন পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ১০০ কেজি মাছের জন্য ৩ কেজি খাবার (১.৫ কেজি একদিন আগে ভিজিয়ে রাখা খৈল ও ১.৫ কেজি গমের ভুসি বা চালের কুঁড়া) প্রয়োজন হবে। খাবারগুলো মাটির পাত্রে অথবা প্লাস্টিকের চটের ওপর রাখলে ভালো হয় কারণ মাছ খাবার খেল কিনা তা সঠিকভাবে জানতে পারা যাবে। যদি ২ দিন পরও খাবার দেখা যায় তাহলে মাছের খাবার কমিয়ে দিতে হবে। এক কেজি আদর্শ মাছের খাবার তৈরিতে গমের ভুসি ৩০০ গ্রাম, চালের কুড়া ২০০ গ্রাম, ফিশমিল ২০০ গ্রাম, আটা ১০০ গ্রাম, আগে ভিজানো খৈল ২০০ গ্রাম সাথে ভিটামিন প্রিমিক্স ১ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, ও চিটাগুড় প্রয়োজনমতো (মণ্ড প্রস্তুত করতে যতটুকু প্রয়োজন ১০০-২০০ গ্রাম) মেশাতে হবে।
আবুল কালাম, গ্রাম : রাঙ্গামাটি, থানা : পীরগঞ্জ, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : আমার গরুর পেটফাঁপা রোগ হয়েছে। আমি জাইমোভেট পাউডার ১ প্যাকেট ও এনোরা ট্যাবলেট ২টি করে খাইয়েছি কিন্তু ভালো হচ্ছে না। আমি এ ব্যাপারে পরামর্শ চাই।
উত্তর : গরুর এ রোগের জন্য ১ প্যাকেট জাইমোভেট অথবা ডিজিটপ পাউডারের সাথে ২ লিটার পানি মিশিয়ে ২ দিন খাওয়াতে হবে, সাথে ১০০ মিলি করে ব্লট স্টপ অথবা নো ব্লট সিরাপ ১ দিন খাওয়াতে হবে।
রেজাউল করিম, গ্রাম : ডাকাহার, থানা : দুপচাঁচিয়া, জেলা : বগুড়া
প্রশ্ন : আমার একটি এক মাসের বাছুর আছে। বাছুরের নাভিতে পোকা হয়েছিল। পোকা বের করেছি কিন্তু নাভি শুকাচ্ছে না। এখন আমি কি করব?
উত্তর : টারপিন তেল অথবা ন্যাপথলিন দিয়ে পরপর তিন দিন নাভি পরিষ্কার করে নেবানল পাউডার অথবা সুমিত ভেট পাউডার দিতে হবে। স্টেপট্রোপেন অথবা এস পি ভেট ইনজেকশন ২ মিলি করে পরপর ৫ দিন মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। এর সাথে এসটা ভেট অথবা হিস্টা ভেট ইনজেকশন ১ মিলি করে পরপর ৫ দিন মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
মো. আবদুর রহমান, গ্রাম : পাঁজিয়া, উপজেলা : কেশবপুর, জেলা : যশোর
প্রশ্ন : পান গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। কি করব?
উত্তর : এটি পান গাছের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগ যাতে না হয় সেজন্য লাগানোর সময় রোগমুক্ত লতা ব্যবহার করতে হবে। এ রোগ হলে আক্রান্ত লতা বা কা- তুলে নষ্ট করে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ বা ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মো. জহুরুল ইসলাম, গ্রাম : পায়রাবন্দ, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : কলা গাছের কচি পাতায় এবং কলার গায়ে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। সকালের দিকে পাতায় ছোট ছোট পোকা দেখা যায়। এর প্রতিকার কি?
উত্তর : কলা গাছে বিটল পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা কচি পাতার সবুজ অংশ নষ্ট করে দেয়। আক্রান্ত স্থানে অনেক দাগ দেখা যায়। আক্রমণ খুব বেশি হলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। কলা যখন বের হওয়ার সময় হয় তখন বিটল পোকা মোচার মধ্যে ঢুকে কচি কলার রস চুষে খায়। এর ফলে কলার গায়ে বসন্ত রোগের মতো দাগ হয়ে যায়। এ পোকায় আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না। আক্রমণ প্রতিহত করতে কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ বার গাছের পাতার ওপরে ছিটাতে হবে। ম্যালাথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি লিবাসিড ৫০ ইসি ২ মিলি হারে ব্যবহার করতে হবে।
কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এলআর), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫